Skip to main content

তাঁবু , মই ও শ্রেষ্ঠ কবিতাগুচ্ছ- নিয়ে আলোচনা- আলোচনায় বেবী সাউ

আলোচনা

বে বী  সা উ

তাঁবু মই আর আমি 



 একজন সাধক বসে আছেন। নদী এসে ধুয়ে দিচ্ছে         সবুজ রঙ। শান্ত অথচ শান্ত না। ভুল নয় অথচ         ঠিকও না।  নক্ষত্রের পতনের শব্দ শুনতে পাইনি বলে     একা বসে আছে বিষাদের মেঘ। বিষাদের! আনন্দের       তবে। আনন্দম্। ঘন সবুজ সঙ্কেত পেরিয়ে নীল           অসীম ছুঁতে চাওয়া এই আমি কী আমিই! নাকি           জীবনের বাঁকে এসে দাঁড়িয়েছে তারা খসার গল্প।           রূপকথার রূপকে উঠে আসছেন ঠাকুমা। কথক           হিসেবে  তিনিই তখন আমাদের ভাগ্য বিধাতা। রাজপুত্রের জন্ম মৃত্যুর জীওনকাঠি মরণকাঠি যেন তাঁর হাতে। ইচ্ছে করলেই যেন তিন জীবনদান করতে পারেন আমাদের প্রিয় বীর রাজপুত্তুরকে আবার তাঁর ইচ্ছেতে থেমে আছে রাক্ষসের জন্মমৃতশোক। কিন্তু একটাই ভয় সমস্ত জনম মৃত্যুর নিশানা ভেঙে যদি জেগে উঠেন কবি! যদি আমাদের সমস্ত রূপকথার মাঝে টেনে আনেন তাঁর নটে গাছের শব্দখেলা। তখন থেকেই আমার ভয় কবিদের এই রাজত্বে। ঠাকুমাও যেন গুটিগুটি বালিকা হয়ে কবিকে সঁপে দিচ্ছেন তাঁর সমস্ত সত্ত্বা। তাঁর গল্প কথনের ভঙ্গিমা। একমনে আউড়ে চলেছেন 

 ''আমার কথাটি ফুরাল
নটে গাছটি মুড়াল
কেন রে নটে মুড়াস
গরু কেন খায়..."

"

চোখের পলকে এইযে ফুরাল শব্দটি কোথাও রচনা করে চলেছে বিশ্বচরাচরের আরম্ভকে। কোথাও বা শত সহস্র বছরের ঘুমকে ডেকে তুলে আনছে বাস্তবায়নের আঙ্গিকে। নিমগ্নগানে ওঠে বসেছেন কবি। ফুরালকে টানতে টানতে এসে পৌঁছেছেন অসীম আলোকে। দিশাহীন নীল প্যাস্টেলের রঙে তখন ভরে উঠছে ড্রয়িং রুমের আসবাব। ঋক্ মন্ত্রে ভরে আছে স্নেহ বিগলিত মায়ের কুমড়ো চারা। দুটি ভাতের জন্য কবিকে বললাম মাংসহত্যা নিষিদ্ধ এশহরে। এ শহরে কতদিন আঁশের গন্ধে কোন বালিকার মৃত্যু হয়নি। মৃদু হেসে কবি আঙুল তুললেন। 
জল আর আগুনের গণ্ডি তে তখন ঈশানীয় মেঘ। পশ্চিমের আকাশে ভেসে উঠছে ধূসর মোষের ছবি। আঙুলের ছাপে স্পষ্ট দেখি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে মর্ডাণ কুরুক্ষেত্র। ভীষ্ম জলের হাহাকারে ধর্মঘট জুড়েছেন রাজস্থানের বিস্তীর্ণ তালাও তে। কন্যাকুমারীর পথ চেনেন নি বলে কবি বেরিয়ে পড়েছেন চেন্নাই এয়ারপোর্টে। হাওয়া নড়ছে। বসন্তের দেশ পেরিয়ে দেখি মৃত বালিকার লাশে ভেসে উঠছে সদ্যজাত কোরকের গন্ধ আর আমি নত হয়ে বসে আছি সমস্ত অকাজের মধ্যে। 
" বন্ধুটি গলায় দড়ি। অন্ধকার এই শালবনে
পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে গিলছে সর্প-হেন বুকসমান ভয়। 
দেখছ না, অখন্ড নয় 
ভাঙা মগজের রেখা ঝুঁকে আছে চন্দ্রস্থানে।
না, না --- এসব পাপ, সুকৃৎ এ দেহে 
দেবতা থাকেন, তুমি এসো ---
এই যে শিংশপা গাছ, তার নীচে অমাবস্যা রাতে 
আমরা বেঁচে উঠব ফের, এবং সেই থেকে 

সাঁঝবাতির চন্দ্রস্থানে শুক্রচার্য বসতি করেন।" 

পরিচয় নেই। ঠিকানাহীন হয়ে আমি চিঠির কাছে দাঁড়িয়েছি। সমস্ত একাকীত্বের দেওয়ালে খেলে বেড়াচ্ছে অকালের টিকটিকি। দেওয়াল এর কান নেই বলে আমার এই নিশ্চিত যাপন এক মুহূর্তে ভুল প্রমাণ করেছে রাজকীয় বাক্য। কবি মুচকি হাসছেন। ঝালাপালা এই হৃদয় নিয়ে অশান্ত হচ্ছি আরও। লক্ সিস্টেম, ব্লক অপশান পেরিয়ে বেরিয়ে পড়েছি পথে। তখনও কবির মৃদু হাসি। ঝনঝন নুপুর বাজিয়ে হেঁটে আসছে মহুলডাংরির জঙ্গল। দেউড়ির কাছে নত হওয়া শাসক বশ্যতা স্বীকার করে জানু পেতে আছে। ফিরে দেখি কবি নেই। কোথাও ঝুলিঝালা ছেড়ে পথে নেমেছেন। তুকতাকে মুছে দিচ্ছেন দেশকাল সীমাবদ্ধতা। থামাতে চাই। থামুন। কবি নিঃশব্দে হেঁটে যাচ্ছেন ওই আলোকের পথে! আলো? না না আলো নয় ঠিক! অন্ধকার তো নয়ই।

" সাইকেল ও স্বর মিলিয়ে যায় রাস্তার বাঁকে। 

এক বনভূমি--- ভাঙা কারখানা।
কানাভাঙা চাঁদ ঝুঁকে আছে অ্যাশশ্যাওড়ার রুগ্ন ডালে। 
হে নির্বাণ, চলো আমরা বেরিয়ে পড়ি সামনে দুর্গা অষ্টমী।"

কতদিন পরে তথাগত নেমেছেন পথে। কতদিনের পর আলো এসে ভরিয়েছে ধৃতরাষ্ট্রের চোখ। এলাচের গন্ধ আসছে কবির রান্নার উঠোন থেকে। কালো কালিতে বুঝি আজকাল হৃৎপিণ্ড মিশে থাকে! উপাসনার মঞ্চ থেকে ক্ষীণ ধুঁয়োয় পরিবেশের ব্যেমো। খাদক মানুষ চেয়ে আছে সুজাতার দিকে। এখানেও বিরাট রাজনীতি। পায়েসের বাটিতে যে ধারাল আঁশের দাগ, থমথম করে উঠছে সমস্ত বাড়িটা। রাসমঞ্চ পেরিয়ে গীতার শ্লোকে ভরে আছে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব। হোমর্স নাইটগার্ডের চাকরি নিয়েছে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কে। ঠিক এই সময় ধরে বেরিয়ে এসেছেন কবি। বাড়ি ভর্তি গেস্ট। টাটকা মাছের বাজারে রিটামেন্ট কবি হাঁসফাঁস করে ওঠেন। এতদিন টাটকা টাই শেখা হয়নি তাঁর! এতদিন সঠিক মাছের খোঁজ পাননি! শুধু সঞ্জয় এর চোখে সমস্ত হারজিতের লড়াই। তখনই নড়ে ওঠে ভুঁইকুমড়োর ডাল, ফুল। 

প্রথমে সে গল্পে ঢুকে পড়েছিল সাপ, মহান ক্ষমতা থেকে উঠে বসেছে আমীর খানের বিস্ফোট মন্তব্য সেই সময়টাতে আমি চুল শুকোচ্ছিলাম ব্যালকনীতে। বাজেট মন্তব্যে শ্বাস বন্ধ করে আছে প্রেসার কুকারের সিটি। আর তখনই হিটলার রাজ্য জয় করে ফিরছেন, কবি ছিলেন ঘুমিয়ে। বিকেলে তাঁর আনন্দ স্মারক। কবিতাও রেডি। ঘূর্নিঝড়ের মতো টেলিফোন এল ড্রাইভারের কাছ থেকে উড়ালপুলের যাতায়াতে মিশে গেছে নোনা রক্তের দাগ। নির্বাক চুপ। বাক পেরিয়ে নামছেন ঘরে। স্তর ভেদ করতে পারেননি বলে বাথরুমের দরজায় টাঙ্গিয়েছেন ওডিলিনের প্যাকেট। উল্লেখযোগ্য ভাবে সেদিনই জামশেদপুরে 144 ধারা। কারফিউ তে ভরে আছে মানগো ব্রীজ। স্নান সেরে ঘরে ফিরছেন গান্ধারী। চোখ বাঁধা। অন্ধকার। 

" হে ছেঁড়া-ফাটা উনজীবন
মৃতরা মৃতদের কবর দিক। বনকলমীর বেড়া ডিঙিয়ে তোমাকে যেতে হবে অনেকটা পথ।

কিন্তু পা বাড়াতেই লুতাতন্তুতে আটকে যায় পা: যাও কোথায়?
আর ঠিক তক্ষুনি 
রুদ্রাক্ষের মতো শব্দদের ডগ ফাটে এবং আদিত্য বর্ণের অক্ষর গুলি 
জড়ো হয় আমার চারপাশে: "

অক্ষীগোলকের মতো চঞ্চল হচ্ছে প্রেম ভালোবাসা। কতদিন প্রিয়পুরুষ থেকে দূরে আছি। যৌনপিশাচের দল রাতভর উল্লাস করছে দলমার বুকে। জঙ্গল ভেদ করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে হাতির শুঁড়। আমি নিমগ্ন হয়ে আছি শব্দের কাছে। মা বারবার তাড়া দিচ্ছেন ডিনারের। ডাইনিং টেবিলে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে কাটা চামচ। লবনের কৌটোতে মরিচের শুকনো দেহ। সুবর্ণরেখার মাঝি তখনই ফোন করে আমাকে। নতুনের আহ্বানে সাড়া দিতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ি। মা রেখেছেন শনিবারের পুজো। বারবেলা ভাঙতে পারিনি বলে কবি চুপ আছেন। নির্দ্ধিধায় ভেঙে দিচ্ছেন আমার সমস্ত গোপন মিথ। এত নিষ্ঠুর তুমি কবি! এত নিষ্ঠুর! নিখুঁত খুনের হাত থেকে বেঁচে হাত বাড়াই বালিশের দিকে। দেখি নোনা জলে অবগাহন সেরে কবি তুলসী মালা জপছেন। আমি মৃদু হাসি এখন। এগিয়ে যাই কাঁচের টেবিলের দিকে। টেবিলময় থইথই নীলরঙের নাইট ব্লাব। স্বাগতম স্বপ্ন। আমার মেয়েজন্ম ভাসছে টেবিলময়। 

"... 
বারবার পরাস্ত হয় মানুষ। বৃষ্টিভেজা হাস্নুহানার কোনো গন্ধই আর বাঁচাতে পারে না তাকে। 

অথচ প্রিয়তমার একটি মাত্র চুম্বনের জন্য 
সে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিল সমরকন্দের সমস্ত ঐশ্বর্য ।"

কাল চিহ্ন পেরিয়ে হেসে ওঠে আমার বায়বীয় সত্ত্বা। কবির সাথে আড়ি চলছে। কতদিন পরে শৈশব ফিরে এসেছে ঘরে। কবিকে ছুঁই নি কতদিন। তাঁবুঘর টাঙিয়েছেন কবি। সেখানেই বসবাস তাঁর। তুলসী মঞ্চে শাঁখ বাজান মা। আমি ঈষৎ ঝুঁকি তাঁর শব্দমালার দিকে। পরক্ষণে সরেও আসি। আলপথে ভ্রমণ ছড়িয়ে রাজনীতি করি শিক্ষক সমিতির। বেকারত্বের জ্বালায় নিভে আসে মন্থর সাপের বিষ। ঘুঙুর পায়ে চুপ থাকে ধানক্ষেত। সুর্বণরেখার জলে বান্ধবীর সিঁদুর ভাসছে। কোর্টে শেষ শুনানির দিন। ততন দিদির মেয়েটা বাংলা তো জানেইনা। চেহারাতেও  আমেরিকার জৌলুস। ভাষা হারাক, শব্দ ব্যবহার। কতদিন কবি নেই। মোরামের পথ ভেঙে ছুটে আসি টেবিল ল্যাম্পের কাছে। দেখি, কবি মৃদু স্বরে কবিতা পাঠ করছেন। বাঁ'হাতে তাড়াচ্ছেন মশামাছি। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি চৌকাঠে। চাঁপাগাছের গন্ধে ঘরটা ভরে আছে।

উৎসব এলেই মনে হয় নির্জনতার প্রয়োজন। কোলাহল ছেড়ে, কথা ছেড়ে শুধু কিছু শব্দের কাছে চুপচাপ বসে থাকতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে অগ্নিদগ্ধ হৃদয়ের দায়ভার ভুলে সমস্ত অপারগতা তুলে ধরি পায়ের কাছে। হাঁটুর বয়েসী তারা, কামারশালার শুচি বস্ত্রে আত্মলাভ করুক। কতদিন সার সার কলসী সাজিয়ে রেখেছি, নাওয়া খাওয়া ভুলে সমর্পণ করেছি কোলাহলের কাছে। শুধু কিছু শব্দের জন্য বারবার নগ্ন হয়েছি। অথচ, কোথায় প্রেম, কোথায় বোধযুক্ত সুখী গৃহতন্ত্র। শুধু অপার ভুলের সীমানা ছাড়া কোন স্বাতন্ত্রতা নেই। নেই কোন বেশ্যা শব্দের শুদ্ধিকরণ। চুপচাপ সরে আসি। হাত পাতি কবির কাছে। বিষন্ন বালকের মতো বলেন--

" শব্দগুলি স্বরবর্ণের মতো নিজেদের পায়ে দাঁড়াক 
এবং হয়ে উঠুক এক একটা রণ-পা
                যেন সুখী গৃহস্থরা তাদের 
ভয় পায়"

বুক ভর্তি শ্বাস তখন আমার। পটমদার ধূধূ প্রান্তর মাতাল হতে বসেছে। কোন সাধনা নেই, মুক্তি নেই অথচ শুধুমাত্র 'আনন্দম্' 'আনন্দম্'! সুর্বণরেখার তীরে বিস্তারিত কাশের জঙ্গল। মৃদু বাতাসে রুনুঝুনু নূপুরের তান। আমাদের বাড়ির পেছন দিকে কচুবন। পা ফেলতেও ভয়। চিতি সাপ ভর্তি। সেখানেই একদিন বিড়ালের আঁচড় পাওয়া গেল। সবাই উৎসুক হয়ে। মুণ্ডু তুলে ধরেছেন প্রাচীনারা।  ছুটু পিসির চোখে সেদিন কী ছিল! প্রেম নাকি জিঘাংসা! নাকি মুক্তি শুধু মুক্তি! বাবা মুখ তুলে চেয়েছিলেন আকাশের দিকে। তখন বুঝিনি---
' যেরকম আমিও একদিন চেয়েছিলাম বস্তুদের শূন্য খুঁড়ে/ আকাশের গায়ে তারাদের মতো শব্দদের গেঁথে দিতে।' 

নেগেটিভ মুহূর্ত নিয়ে আমার যে বিরাট অহংকার ছিল, শব্দের বাষ্প ছটায় নিভে গেল বিবস্নানের শহর। শহরে নামলেই যেন অপার প্রশান্তি, বিকেলমেলার মাঠে জড়ো হচ্ছে শৈশব , মুক্তির অতীত। আমি চুপচাপ বসে বেঞ্চে। সামনে দৃশ্যমান হচ্ছে চিত্র। ছোটবেলার। মুগ্ধ মনে দেখছি ছোটদের স্কেটিং। বাস্কেটবল। টেবিল টেনিস। হঠাৎই ধূঁয়াধার মেঘের বিপুল ভাবে আছড়ে পড়া। প্রাত্যহিক নশ্বরতাকে ভেঙে খলখলিয়ে উঠলেন প্রকৃতি। জলের স্রোতে ভাসল ছোটবেলা। শৈশবখানা। কবি ধরলেন কলম। কবিতা। আঁকলেন নশ্বর আলোকে বিগলিত করুণাধারা। সামনে আছড়ে পড়া জলের মাঝে কবির আনন্দমযাত্রা। আমি আরও একবার যেন ছুলাম তাঁকে। তিনিও যেন অপেক্ষা করছিলেন কখন ছুঁই তাঁর বোধকে। ভাবনাকে। 

কিছু কিছু কবিতাতে সম্পূর্ণ ভাবে যেন আমি উঠে আসছি। আমিই যেন একোমবদ্বিতীয়ম। যেসব কথা লেখার সাধনায় উপাসনা এঁকেছি ঘর জুড়ে কত জন্ম আগে ছুঁয়ে গেছে সেসব শব্দের মাধুর্য। জলের কাছে গিয়ে বসি। কত শতাব্দীর ইতিহাস ঘেঁটে আমার কাছে এসেছে। মাটি চাপা অভিমানে মুখ তুলে দেখাচ্ছে সেই প্রাচীনতম পথ। মোবাইলের ফ্যাশ লাইটে ধরার চেষ্টা করি। যে পথ মিথ্যে দিয়ে গড়া, শতসহস্র বছরের তোপ ধ্বনি ' বাড়ন্ত মিথ্যার পাশে সত্য আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।' বান্ধবীর বানানো মিথ্যা নিয়ে পথ হাঁটি। ভাবি বাড়ুক আরো বাড়ুক। সমস্ত সত্য তখন হুড়মুড়িয়ে ঢুকবে এই শহরে। ভেঙে যাবে বালির বাঁধ, আত্মদহন। আর তখনই বসন্ত নামবে জামশেদপুরে, শহরে। 

"ঐ শোনো---
বনিখেত ফরেস্ট বাংলোয় বৃষ্টি বাজছে টিনের ছাদে
যেন-বা রবিশঙ্করের কামেশ্বরী। 
তুমি মাটি ও আকাশ হও আর চয়ন করো কায়া
               যাদের শরীর নেই।
রাত্রিদের গান শোনায় নদী।
হে মধুক্ষরা জল
ওষধি ও বনস্পতিদের জন্য তুমি বহন করো শান্তি। 
আমি ছড়-টান থামাইনি।
হরীতকীবনে গান গাইছে বউবসন্ত।
বাঁশের দণ্ড হাতে ঠুকঠাক হেঁটে যাচ্ছেন বৃদ্ধ 
এবং কুমারীর হাতের কাঁকন ভেঙে ফেলছে শব্দের শূন্য। 
তথাগত শূন্যবাদী নন। মৃত্যু ভেঙে দেয় রূপটান এবং মুক্ত করে জীবন।
আমি স্নান করে এসেছি সরস্বতী নদীর লুপ্ত জলে।
লাল পেড়ে কাপড় ও পাম্প-শু পরে
শব্দেরা হেঁটে যাবে ভাবমুখে। মশলার বটুয়া হাতে জীবনের বাড়ি। 

জীবনের ছেলেমেয়ে আছে, ভাত- কাপড় । বোধিগাছ নেই।"

একাকীত্ব কী শুধুমাত্রই অভ্যেস একটা! অভ্যেস মানেই তো সাধনা। চিরাচরিত প্রথা ভেঙে এগোই যাওয়া কোন এক স্বপ্নের দেশে। হ্যাঁ স্বপ্নই তো, মনের কুঠুরিতে পুষে রাখা সন্দর্পনে আলোক বিন্দু, কেউনা জানুক, ভাবুক তাইতো। কবিকে তবে হাঁটতে চেয়েছেন ওই গোপন কুঠুরির দিকে। যে কুঠুরি ছুঁয়েছে মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের রথের চাকা, ভীষ্মের মুকুট অথবা ইলিয়াস থেকে উঠে আসা দেবীর স্তন। দৌড়ে গেছেন পরাশরের কাছে শব্দের মানে খুঁজতে আবার মায়ের কাছে বসেছেন বর্ণপরিচয়ের যুক্তাক্ষর খুলে। পাণিনি তখন চুপ করে হাসছেন। চুপ করে ভাবছেন, এইযে হেঁটে আসছে প্রস্তর যুগ, সেখানে কী সুশীতল জলের আভাস পিয়াস মেটাতে পারবে! বিষ্ণুপুরের রাসে ভাঙা বাঁশির সুর তো পিরামিডে নিজস্ব আত্মাকে দান করেছে তাঁর কবিতারা! একই আত্মতুষ্টি! নাকি হত্যা! হত্যা শব্দটি মানানসই হবে না কারন সবটুকু লেখা এসে পৌঁছেছে সাক্ষাৎ বর্তমানে--- যেখানে অতীতের মৃত্যুস্তুপ নেই নাকি ভবিষ্যতের ভুলভ্রান্তিময় আশা-নিরাশা। আর এখানেই আমার রান্নাঘর ঝনঝনিয়ে ওঠে আর কফির লোভে কাপে চুমুক দিই। আহা! বর্তমান!

Comments

Popular posts from this blog

প্রথম ব্লগ সংখ্যা স ম্পা দ কী য় আবহমান একটি  ষান্মাসিক কাগজ, কবিতা, গল্প, উপন্যাস এবং দার্শনিক সন্দর্ভের। আমাদের মূল উদ্দেশ্যঐতিহ্যের সাথে আধুনিকতার মিশেলে যে সময়খণ্ড আমাদের চালনা করে যাচ্ছে, তাকে অনুধাবন করা। কারণ সমকালীনতার আধার ছাড়া চিরকালীনতার আধেয়কে ধরা অনেক সময় সম্ভব হয় না। আর ঠিক এ কারণেই শাশ্বত লুকিয়ে থাকে ক্ষণিকের মধ্যেই। কারণ আমাদের জীবন ক্ষণিকের ঘেরাটোপে চিরকাল অনন্তসন্ধানী। চেতনাকে চৈতন্যসন্ধানী করে তোলার জন্য এ ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। আর তার জন্য যা প্রয়োজন, তা হল, বর্তমানে টুকরো টুকরো বোধিগুলোকে চয়ন করা। বর্তমান সময়খন্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল তরুণ প্রজন্ম। সেই তরুণদের হাতে, ভাবনায়, কথনে এবং সৃষ্টিতে রচিত হয়ে চলেছে,- যে আবহমান সময়খন্ডের মধ্য দিয়ে তারা চলেছেন,- সেই 'সময়'। সেই সময়কালকে অনুধাবন করতেই এই ব্লগজিন। দুই  বাংলার তরুণ এবং উল্লেখযোগ্য কবি ও লেখকরা নিয়মিত লিখুন এখানে। কবিতা, ছোট ছোট গদ্য, বড় গদ্য- সব। মনে রাখবেন, আমাদের কোনো পার্টি নেই, কোনো নিষেধাজ্ঞাও নেই। নতুন ভাবনা আর নতুন দর্শন তথা ডিস্কোর্সকে আমরা স্বাগত জানাই। একদিনে তো সময়টা

গিলগামেষের মহাকাব্য- লিখেছেন সুজন ভট্টাচার্য

প্রবন্ধ সু  জ  ন     ভ  ট্টা  চা  র্য গিলগামেষের   মহাকাব্য ছোটবেলা থেকে আমরা সবাইই শুনে আসি পৃথিবীর প্রথম মহাকাব্য হল রামায়ণ আর আদিকবি হলেন বাল্মিকী। সেই সাথে এটাও আমাদের জানা হয়ে যায়, পৃথিবীতে চারটি মহাকাব্য আছে। আমাদের রামায়ণ – মহাভারত বাদে অন্যদুটি হল গ্রীসের ইলিয়াদ এবং অদিসি। চারটির মধ্যে দুটিই কিনা আমাদের মাটিতে লেখা, ভাবলেই কেমন যেন গর্ব অনুভব হয়। সেই গর্বের আবহাওয়াকে আমরা  মননের জমিতে লালনপালন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এস ওয়াজেদ আলি সেই যে লিখেছিলেন, “সেই ট্র‍্যাডিশন  সমানে চলিতেছে”, তার আলোকে আমাদের বুকও কিঞ্চিৎ স্ফীত হয়ে ওঠে – দেখেছ, মুসলমান হলেও ঠিক স্বীকার করে নিয়েছে।  একটা বিষয়ে সকলেই একমত যে কোন মহাকাব্যই একজন কবির রচনা নয়। বিভিন্ন অনামা কবির কল্পনাতেই মহাকাব্যের প্রাথমিক কাঠামো নির্মিত হয়। এবং গানের মাধ্যমেই সেই রচনা জনসমাজে পরিব্যাপ্ত হয়। নানান সময়ে আরো বিভিন্ন কবি মূল কাঠামোর মধ্যে নিজস্ব শব্দ ঢুকিয়ে দেন। পরবর্তীকালে কোন একজন কবি সেগুলিকে সংকলন করেন এবং তাঁকেই মহাকাব্যের স্রষ্টা বলে গণ্য করা হয়। বাল্মিকীর রামায়ণে লবকুশের রামায়ণগানের উপাখ্যানে সম্ভবত সেই স